অন্য জীবনের স্বাদ প্রথম পর্ব

তিতলি আর রাহুল বেড়াতে গেছিল সমুদ্রে একটা টিম এর সঙ্গে, ওরা একটা বড়ো জাহাজ করে সমুদ্রে যাই।সমুদ্রে সাইক্লোন শুরু হয় এবং জাহাজ ভীষণ জোরে দুলতে থাকে , সবাই ভীষণ ভয় পেতে শুরু করে।

আকাশ টা পুরো মেঘে ঢেকে যাই এবং বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করে , কিছু লোককে ছোট ছোট নৌকা করে বাঁচানোর চেষ্টা শুরু করা হয়।ঝড়ের বেগ আরো বাড়তে শুরু করে এবং জাহাজের বাকিরা ভীষণ ভয় পাই, নাজানি কত জনের প্রাণ কেড়ে নেবে এই ঝড়।নৌকা গুলিতে ২০০ জন লোককে উদ্ধার করা গেছিল , ঝড়ের বেগে জাহাজটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে যেতে শুরু করে, তিতলি মনের দিক থেকে ভীষণ শক্ত মেয়ে, কিন্তু এরকম কঠিন সময়ে ওর মানসিক অবস্থা ভালো না থাকা তাই স্বাভাবিক, তবুও সে সাহায্য করেছে উদ্ধারকার্য এ এবং ওর দাদা(কাজিন) রাহুল কে সাহায্য করেছে উদ্ধারকার্য করতে এবং মানসিক ভাবেও দৃঢ় হতে।

তিতলির বহুদিনের ইচ্ছা ছিল সারা পৃথিবী ভ্রমণের, ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল কোনো জাহাজের ক্যাপ্টেন হতে বা পাইলট হতে এবং পৃথিবী ঘুরতে, কিন্তু ভাগ্য বিধাতার হতেই থাকে, ২৫ বছর বয়সে মায়ামি ইউনিভার্সিটি এর লেকচারার নির্বাচিত হয় , তার পর ৪ তে বছর কেটে যাই, আমেরিকা তে একাই কাটিয়ে দিল সে, মাঝে মাঝে নিজের ওপর অবাক লাগে তার, যে মেয়েটা বাবার বাইক এ চড়ে ১স্ট ইয়ার পর্যন্ত কলেজে যেত সে কিনা ৪ বছর একা আমেরিকা তে কাটিয়ে দিলো! মাঝে মাঝে মধ্যরাতে ঘুম ভেংগে যাই তার, হটাত করে মনে পড়ে যাই কলেজে স্ট্রিট এর সেই ফুচকা ওয়ালা কাকুর কথা, অনেকদিন খাওয়া হয়নি, অনেকদিন ছুয়ে দেখা হয়নী কোনো বাংলা বই।মেঘ আরো ঘনো হয়, সব তারা ঘুমিয়ে পড়ে রাতের অন্ধকারে, এই প্রবল বিপদের সময় ও তিতলি হটাত মনে পড়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের এর বিখ্যাত গান “ঝড় উঠেছে বাউল বাতাশ আজকে হলো দেরি” হালকা বৃষ্টি শুরু হয় , জাহাজটা আরো ডুবতে শুরু করে, এখনও প্রায় ৩৫ জন আছে এই জাহাজ বাকি বাচ্চা ও বয়স্ক দের পাঠানো হয়েছে নৌকা করে, তিতলি সাঁতার জানে না, তাই রাহুলের ওপর দায়িত্ত্ব একটু বেশীই।

জাহাজের আয়ু ফুরিয়ে আস্তে থাকে, রাতের অন্ধকারে এই বিপদ আরো ঘনীভূত হয়। ঝড়ের বেগ আরো বাড়তে থাকে এবং জাহাজ খুব দ্রুত ডুবতে শুরু করে, সময় নষ্ট না করে রাহুল তিতলি কে পিঠে জড়িয়ে নিয়ে জলে নামার জন্য তৈরি হয়, কিন্তু জাহাজের ব্লেডের ঝটকায় তারা পড়ে যাই, এবং ঠান্ডা জলের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, ভাগ্যিস তাদের কাছে লাইফ জ্যাকেট ছিল এবং রাহুল তিতলি কে দরি দিয়ে বেঁধে রেখেছিল নিজের সাথ এ।পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙ্গলো রাহুলের, প্রথমে তার কিছুই মনে পড়ছিল না, তারপর হটাত খেয়াল হতেই সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, এবং তিতলি কে খুঁজতে থাকে, কিছু দূরে একটা পলির স্তুপে খুঁজে পাই সে তিতলিকে, তখনও জ্ঞান আসেনি তার, রাহুল জল নিয়ে এসে তার মুখে ছেটাই, খানিকটা জল ওর পেটে চলে গেছে ,সেটা বার করতে হবে আগে, রাহুল হালকা করে ওর বুকে চাপ দিলো আর তারপর ওর মুখে মুখ লাগিয়ে টানতে থাকলো, বেশ অনেকটই জল বেরোলো ।

মিনিট ২০ পর ঘুম ভাঙলো তিতলি র , রাহুল কিছু নারকেল গাছ থেকে নারকেল পারে এনেছিল, ও যখন জাহাজের নিরাপত্তা নিয়ে ট্রেনিং করেছিল তখন বিভিন্ন কঠিন সময় কি করে হ্যান্ডেল করতে হয় সেটা ভালো করেই রপ্ত করেছিল।তাই পাশের জঙ্গল থেকে কিছু ফল র ডাব জোগাড় করে নিয়ে আসে সে আর কিছু গাছের ডাল আর নারকেল গাছের পাতা নিয়ে আসে সে ঘর করার জন্য।ঘুরতে এসে এই অদ্ভূত বিপদ এ পড়তে হবে তা কখনো ভাবিনি কেউ, না জানি বাকি নাবিকরা এখন কোথায় ! কষ্টে বুকটা ফেটে উঠলো রাহুলের, নাজানি কখনো ফিরতে পারবে কিনা চেনা জগতে, তবুও তাকে শক্ত থাকতে হবে , পরিস্থিতি মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখায়, মানুষ চিনতে শেখাই, চাইলে তারা জোর করে কোনো নৌকাই উঠে যেতে পারতো কিন্তু করেনি তারা।

তিতলি আসলে উপভোগ করছিল এই পরিস্থিতি কারণ সে জীবনে ঝুঁকি নিতে ভালোবাসে, জীবনে এই অনিশ্চয়তা টা ওকে খুব আকর্ষিত করে, ক্লাস ১২ এ পুজোর আগে এক লোডশেডিং এর রাতে সে রাহুল এর ঘরে ঢুকে ছিল এবং ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে ছিল ওর ঠোঁটে, সে ছিল এক অভূতপূর্ব অনুভূতি , সেই যৌবন এর একেবারে শুরুতে প্রথম চুমুর স্বাদ এখনও ভোলেনি সে, কিন্তু তার পর ওরা এইনিয়ে খুব লজ্জিত হয়েছিল এবং কাউকে জানাইনি এই কথা।

তিতলি বরাবর একটি প্রোগ্রেসিভ , ওই ঘটনাকে ও নিজের দোষ বলে মনে করেনা, ওটা বয়সন্ধী কালের একটা কমন ভুল যেটা হতেই পারে। আসলে তিতলিকে একবার ড্রেস চেঞ্জ করতে দেখে ফেলে রাহুল , আসলে সেদিন রাহুল ওর একটা বই ফেরত দিতে গিয়েছিল সেদিন, কিন্তু দরজাই নোক করতে ভুলে যাই সে, তিতলির সুডোল স্তোন দেখে সে মুগ্ধতার ২ মিনিট কিছুই বলতে পারেনি, ওর খুব ইচ্ছে ছিলো ছুয়ে দেখার , ইচ্ছা ছিল ওর যোনী দেশের ওই সুন্দর বনে হারিয়ে যেতে, কিন্তু সে ভয়ে চলে আসে , তার পর ২ উইকস ওদের মধ্যে কোনো কথা হোয়নি। সেসব মনে পড়লে হাসি পাই এখন।রাহুল সমুদ্র থেকে কিছু মাছ আর কয়েকটা ঝিনুক নিয়ে আসে , তিতলি খুব খুশি হয় ঝিনুক দেখে। ওদের মাছ পুড়িয়ে খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই, এই ভাবে ওরা প্রায় ৪ দিন কাটিয়ে দিলো ওই দ্বীপ এ।

৪ দিন পর ওদের প্রবল খাদ্য সংকট দেখা দিলো, রাহুল জঙ্গলে কাট কাটতে গিয়ে পায়ে চোট পাই, তার পর থেকে সে আর শিকার করতে যেতে পারেনি, তাই তিতলিকে জঙ্গলে যেতে হলো এবং সে কিছু ফল সংগ্রহ করল কিন্তু তা দুজনের জন্য বড্ডো কম।

Comments:

No comments!

Please sign up or log in to post a comment!