গুরুজন – ১

হারু গায়ের ছেলে। লেখাপড়া বেশি হয়না এই গায়েতে , প্রাথমিক স্কুলের গন্ডি পার হতে না হতেই সব ছেলেরা চলে যায় কোনো শহরে। ঠিক এমনি হয়েছে হারুর জীবনেও। অনেক ছোটবেলায় মা কে হারিয়ে হারু অল্প বয়সেই চলে গেছিলো কোলকাতা , সেখানে এক কারখানায় কাজ করে নিজের আর গায়ে থাকা বোন আর বাবার জন্য টাকা পাঠায়। কদিন পর বোনকেও একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেয়। বাড়িতে এখন বাবা একা । হারুর শহুরে বন্ধুরা ওকে মজা করে বলে তোর বাবার আর একটা বিয়ে দিয়ে দে,।।।। ওদের কথা গুলো যেন ভগবান শুনে ফেলেছিল।

বাবার চিঠি পরে হারু জানতে পারলো তার বাবা তাকে ডাকছে। সভাবত হারু নিজের ব্যাগ পত্র গুছিয়ে রওনা দিলো গায়ের দিকে। প্রায় এক বছর পর হারু বাড়ি ফিরছে। বাড়ি এসে বাবার মুখে যেটা সুনলো তাতে হারুর শহুরে বন্ধুর কথা মনে পড়ে গেল।

পাশের গ্রামের একটি মেয়েকে হারুর বাবার খুব পচ্ছন্দ হয়েছে। তাই তার ছেলেকে নিয়ে তার বাড়িতে যাবে। হারু বাবার কথার উপর কোনোদিন কোনো কথা বলেনি, আজও বললো না, বোকা হারু চললো নিজের বাবার জন্য মেয়ে দেখতে।

মেয়েটি ছিল সত্যি রূপবতী, যৌবনের নতুন ছোঁয়া পেয়েছে সবে শাড়ির উপর দিয়ে দুধ দুটো যেন হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে,চুলে বেননী করে কাঁধের একপাশে রেখে মেয়েটি যেন মোহিত করে দিলো হারুর বাবাকে। শাড়ির আঁচলটা কোমরে গুঁজে সবাইকে চা দেওয়ায় সময় হারুর বাবার প্রথম নজরে যায় ওর পেটের খাঁজের দিকে। হারু একটি বার মাত্র মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে নেয়। লজ্জায় কোনো কথা বলতেই পারেনা। কলকাতায় এত বছর থেকেও হারু ঠিক আগের মত বোকা আর ভীতু রয়ে গেছে। হারুর বাবার প্রস্তাবে রাজি হয়না কেউই।

মেয়ে, মেয়ের বাবা মা সবাই হারুর বাবাকে বলে তোমার অনেক বয়স , আমাদের বাচ্চা মেয়েকে তোমার হাতে আমরা তুলে দিতে পারিনা। হারুর বাবা চিন্তায় পড়ে যায়। মনে মনে ভাবে এই মেয়ে তো শুধু আমার ঘরেই যাবে। অনেক চিন্তা করে বলে ঠিক আছে আমাকে দিতে হবে না আমার ঘরে জোয়ান ছেলে আছে তাকে তো দিতে পারবেন। মেয়ের পরিবার রাজি হয়ে যায়। হারু আসলে যে কি হলো কিছুই বুঝতে পারেনা , ওর মাথায় এত বুদ্ধি নেই যে বাবার এই চালাকি ধরতে পারবে।

যথা সময়ে হারুর সাথে ওই মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। অবশেষে আসে সেই রাত , ফুলশয্যার রাত।

হারু বুঝতে পারেনা কেন সবাই তাকে নিয়ে এত মজা করছে, কেন তার ঘরটাকে লাল আলো দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে। আজকের কি করতে হয় এগুলো কিছুই জানেন সে আর কেউ তাকে কোনোদিন বলেও দেয়নি।

যাইহোক হারু ঘরে ঢুকে দেখে তার ঘর লাল আলোতে ভোরে গেছে , খাটের পাশে রজনীগন্ধার লাইন , খাটে গোলাপ ফুল আরো কত কিছু, খাটের পাশে একটা দুধের গ্লাস। খাটের মাঝে বসে আছে সেই মেয়েটি যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তার বাবার কিন্তু সে এখন হারুর বউ। খাটে ওঠার আগে দুধের গ্লাসটা মুখে দিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে নিল। এরপর বউয়ের সামনা সামনি মুখ করে খাটের এক কোনে বসে বউকে দেখতে লাগলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো কি সুন্দর বউ আমার , এজগতে এমন সুন্দরী বউ মনে হয় আমার ছাড়া আর কারো নেই। খুব মজা পাচ্ছিল নিজের বউকে দেখে। এই ভাবে দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল হারুর মনে নেই।

এই ভাবে পরদিন রাতেও একই ঘটনা হারু তার বউকে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লো। তৃতীয় দিন হারু ঘুমালো না , কিন্তু কেন জানিনা হারুর বউ রাগ দেখিয়ে নিজে নিজেই ঘুমিয়ে পড়লো।

পরদিন হারুর টিকিট কলকাতার। বউ বাবাকে বিদায় জানিয়ে হারু চলে এলো কলকাতায়। এখনে এসে শহুরে বন্ধুদের সব কিছু খুলে বললো। কেন জানিনা সবাই হারুকে নিয়ে মজা করতে লাগলো , হাসাহাসি করতে লাগলো। হারু এখন আর বেশি করে টাকা পাঠাতে লাগলো নিজের বউ এর জন্য। মাঝে মাঝে চিঠিতে খোঁজ খবর নেয় হারু, কিন্তু বউ ,বা বাবা কেউ তাকে বাড়ি যেতে বলে না। একদিন চিঠি আসে হারুর ছেলে হয়েছে , । হারু তো আনন্দে আত্মহারা সবাইকে মিষ্টি কিনে খাইয়ে দাইয়ে একাকার। তার কাছের বন্ধুরা তাকে বলে তুই তো এতদিন এখানে আর তুই তো বাসররাতেও কিছু করিসনি , তবে তোর বাচ্চা হলো কি ভাবে। হারু ওদের গুজবে কান দেয় না। ওর আনন্দ যেন ধরে না। বাড়িতে যাবার কথা ভাবলেও কারখানা থেকে ছুটি পায়না। প্রায় দুমাস পরে তার ছুটি হয়। নিজের ছেলেকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে হারু। অবশেষে ট্রেনে উঠতে উঠতে ভাবে আজ আমার ছেলেকে আমি দেখতে পাবো।

অনেকদিন পর বাড়ী আসলো হারু, নিজের বৌটাকে চিনতে পারছিল না, একটু যেন মোটা হয়ে গেছে।। নিজের বাচ্চাকে দেখে মন ভরে গেল হারুর, কি সুন্দর চেহারা , যেন হারুর বাবার মুখটা বসানো। হারুর বউ যেন খুশি হলো না হারুকে দেখে। তবুও হারুর খুশির অন্ত নেই।

রাতে হলো নতুন সমস্যা, ছোট্ট একটা ঘরে একটাই খাট , বউ নিজের ছেলেকে নিয়ে খাটে থাকবে, আর বাবার শরীরটাও ভালো না, তাই ঘরের মেঝেতে চট বিছিয়ে হারুর বাবা থাকলো। আর হারুকে বারান্দায় শুতে দিলো। নিজের ছেলের কথা মনে করতে করতে হারু ঘুমিয়ে পড়েছিল।

রাত প্রায় অনেক, হটাৎ একটা খট খট আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেল হারুর। আওয়াজ টা ঘর থেকেই আসছে। হারু আধ বোজা চোখে ঘরের খোলা জানলা দিয়ে ঘরের দিকে তাকালো। কালকে পূর্ণিমা গেছে, তাই বাইরের আকাশটা আলোয় ভরপুর। আর হারুর ঘরটা বেড়া দেওয়া। তাই জোৎস্নার আলো ফুকো ফাটা দিয়ে ঘরে ঢুকেই যায়। সেই আলো আধারীতে হারু দেখলো ওর বউ খাটে শুয়ে আছে, , সেটা হারু বুঝেছে শাড়ি পড়া দেখে নয়, অগোছালো চুল দেখে, অবাক তো তখনই হলো যখন হারু দেখলো ওর বউ দুই পা ফাক করে শুয়ে আছে, আর একটা অন্ধকার কালো ছায়ামূর্তি ওর বউয়ের উপর ওঠানামা করছে। ছায়াটি যখনই বৌএর কাছে নেমে আসছে তখনি হারুর বউ একটা বড় নিশ্বাস নিচ্ছে আর তখনই খাটের পায়ায় ওই খট করে আওয়াজ টা হচ্ছে।

হারু বুঝতে পারলো ওই কালো ছায়ামূর্তি টা আসলে ওর বাবা, কিন্তু কেনই বা ওর বাবা নিজের বৌমার বুকের উপর উঠেছে, আর কেনই বা ওর বউ কিছু বলছে না, কেনই বা ওর বউ অমন আওয়াজ করছে। এসব নানা চিন্তা মাথায় আসছিল। কিন্তু সরল সোজা হারু জানাল থেকে চোখ সরিয়ে নিল , আর নিজের বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো, তখনও ঘরে খট খট আওয়াজ আর ওর বউএর বড় বড় নিঃশাস এর আওয়াজ আসছিল। হারু নিজের মনে মনে ভাবল এটা ঠিক না, বাবা যাই খুশি করুক না কেন তা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা এক মহা পাপ। উনি হলো গুরুজন,,,,,,,,,,,,,,,,

Comments:

No comments!

Please sign up or log in to post a comment!