বাংলা চটি উপন্যাস – একটি গ্রামের রুপকথা – ১০
বাংলা চটি উপন্যাস – অনুদি হেসে ফেলে বলে, তুই আমাকে এখনো ভুলতে পারিস নি তাই না? –পারলে মন্দ হতনা কিন্তু অতটা অকৃতজ্ঞ হতে পারলাম কই? –ও কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা নয়? –ভালবাসা বাদ দিয়ে কৃতজ্ঞতা হয় নাকি? –তুই দময়ন্তীকে ভালবাসিস না? –খুব ভাল মেয়ে, কে না ওকে ভালবাসবে? আর ভালবাসি বলেই স্বার্থের কথা না ভেবে ওর সুখ কামনা করি। –ইচ্ছে করছে তোর গালে ঠাশ করে এক চড় লাগাই–। –তুমি দিদিমণি তাই তোমার ঠাশ করে চড় মারতে ইচ্ছে হয়। তোমাকে একটা ঘটনার কথা বলি, সুদেষ্ণাদি জানে।আমাদের ব্যাচের একটি মেয়ে ধনী পরিবার।একটি ছেলের সঙ্গে প্রেম হল,ছেলেটির আর্থিক অবস্থা ভালো নয় ।মেয়েটির বাড়িতে ঘোর আপত্তি।মেয়েটিকে বোঝাল ছেলেটি যদি প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় তাহলে বাপ-মা তাদের বিয়ে মেনে নিতে বাধ্য হবে। যেই ভাবা সেই কাজ কিন্তু শেষ রক্ষা হলনা।মেয়েটির বাবা জানতে পারল এবং মেয়ের গর্ভপাত করিয়ে,প্রভাব খাটিয়ে ছেলেটিকে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে। অনুদি আমি বিশ্বাস করিনা প্রেমে কোন কৌশল হয়। অনুরাধা অবাক হয়ে শুনছিলেন, দাঁত দিয়ে ঠোট কামড়ে কি যেন ভাবল। তারপর বলল, তুই কি বলতে চাস আমি কৌশল করেছি? –আমি কিছু বলতে চাইনি।তুমি জানো তুমি কি করেছো? –শোন মনা তুই যথেষ্ট পরিণত বুদ্ধি।স্বীকার করছি, ছেলেদের প্রতি একটা বিতৃষ্ণা জন্মেছিল মনে। মনে করতাম ছেলেরা লোভী। ইচ্ছে হল পরীক্ষা করি ধারণাটা সঠিক কিনা? তোর সামনে পুর্ণাঙ্গ নারীকে মেলে ধরেছি,অবাক বিস্ময়ে দেখলাম তোর চোখে মুখে নিঃস্পৃহতা। আমার নারী-সত্ত্বা আহত–ক্ষিপ্ত হল পরাজয়কে কিছুতে মেনে নিতে পারিনি।মরীয়া হয়ে তোকে মিলিত হতে বাধ্য করেছি।তুই আমার থেকে অনেক ছোট সমাজ আমাদের মেনে নেবেনা–শান্তিতে বাচা দুঃসহ হয়ে উঠবে। আমি তোর জীবনটাকে নষ্ট করতে চাইনি।ভেবে দেখলাম জীবনে চলার পথে একজন সঙ্গি অত্যন্ত প্রয়োজন, রাজদীপকে বিয়ে করছি। ওকে হয়তো ভালবাসিনা কিন্তু ওর মধ্যে দেখেছি ভদ্রতাবোধ, অন্তত চুক্তি ভঙ্গ করবেনা। অনুদি সম্ভবত দাদার কথা বোঝাতে চাইছে।অনুদির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমাকে দেখহে।আমি বললাম,একটা কথা বলছি হয়তো একটু রুঢ় শোনাবে। অনুদি আমরা অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকি,নিজের দিকে তাকাবার কথা ভাবিনা। নিজের বেলা যা খেলা অন্যে করলে তাকে আখ্যা দিই বেইমানি? –তুই আমাকে যা খুশি বল,আমি তার উত্তর দেবোনা। তুই বলেছিস নিজের স্বার্থ নয় অন্যদিকটাও দেখা উচিত।মনা তোকে বোঝাতে পারব না বিশ্বাস করবি না আমি জানি।একটু আগে তুই-ই বলেছিস ভালবাসলেই বিয়ে করতে হবে? –এবার শোনো দময়ন্তীর কথা।আমার দিক থেকে সমস্যা এলে আমি দেখতাম। সমস্যাটা দময়ন্তীর তাকেই তার মোকাবিলা করতে হবে। দিয়ার জন্য আমি কতদূর যেতে পারি তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা। কিন্তু কৌশলকে আমি ঘৃণা করি। কবি অনুরাধা বসু মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে।দুই ভাইয়ের মধ্যে কি দুস্তর ব্যবধান। সে যে ভুল করেছে, দময়ন্তী সেই ভুল করেনি।ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে।অতি কষ্টে নিজেকে সংযত করে।বয়সের তুলনায় মনা অনেক পরিণত। হিজলতলি আর আগের মত নেই। সরোজমোহন এলে কাউকে জিজ্ঞেস না করে বাড়ি চিনে আসতে পারবেনা।আমাদের একতলা পলেস্তরা খসা বাড়িটাই কেবল আগের চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ।রাস্তার দু-ধারে সারি সারি পাকা বাড়ি। রমেশ কর্মকার এখন কল্যাণ ঘোষের সাঙ্গাত। মলিনাবৌদির চালচলন বদলে গেছে। শুনলাম কেলো নাকি ধরা পড়েছে। একটা গুজব বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে হিজলতলিতে নাকি পৌরসভা হবে। জমির দাম বাড়ছে হু-হু করে। বিডিও হিসেবে নিয়োগ পত্র পেয়েছি।পনের দিনের মধ্যে জয়েন করতে হবে, উত্তর বাংলায় গরুবাথানে পোস্টিং পেয়েছি। তবু আমার মন খারাপ। কদিন আগে ঘুরে এলাম আড়াইডাঙ্গা থেকে। ঠাম্মা, মা–সবার সঙ্গে দেখা করে এলাম।মা বেশ মানিয়ে নিয়েছে, মাকে পেয়ে ঠাম্মাও খুব খুশি। কানাই কামার আমাকে দেখে বলল, একেবারে মনিদার ছাঁচ। ক-মাসে বাড়ির ভোল বদলে গিয়েছে।রেবতীবৌদির কথা মাকে বললাম।মা বলল,তুই আবার অতুলকে কিছু বলতে যাস না। গোছগাছ করছি সময় করে দেখা করে আসছি বরেনদা সুগতদা মানিকদার সঙ্গে,সবাই বেশ খুশি, বোজোদি থাকলে আজ কি খুশিই না হতো। আশুস্যার রিটায়ার করেছেন,একদিন বাড়িতে এসে হাজির।মাথায় হাত দিয়ে আশির্বাদ করে বললেন, আমি জানতাম তুই একদিন বড় কিছু হবি। বাবা থাকলে খুশি হতেন নাকি? সুদেষ্ণাদি বলেছেন, চাকরিতে জয়েন করো।সময় করে একটা পার্টি দিতে হবে কিন্তু। রাজদিপবাবুর সঙ্গে অনুদির বিয়ে হবে একেবারে ঠিকঠাক।দিয়া ফোন করেনি,মনে হয় লজ্জায় কলকাতা থেকে এদিকে আসছে না।দিয়া বলেছিল গোসাই আমি চিরদিন তোমারই থাকবো।কিন্তু অবস্থা এক জায়গায় থেমে থাকে না।কত কিই তো বলে মানুষ কত কিই তো ভাবে সব কি বাস্তবায়িত হয়? দেখা হলে বলতাম,দিয়া বিশ্বাস করো আমি কিছু মনে করিনি।দ্যাখো নিজের সুখের জন্য বাবা-মাকে কষ্ট দিলে কেউ সুখী হতে পারেনা।আমার জন্য দুঃখ কোর না। বান্ধব সমিতিতে গেলাম শেষবারের মত। বইয়ের মধ্যে মুখ গুজে যথারীতি বরেনদা। আমাকে দেখে বললেন,এই যে বিডিও সাহেব কোথায় পোস্টিং হল? –গরুবাথান। আপনি চেনেন? –খুব ভাল,ট্রাইবাল প্রধান জায়গা।মানুষগুলো সরল সাদাসিধে।তবে কি নির্জন–বই নিয়ে যা অবসরের সঙ্গী হবে। তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, সবাই চলে যাচ্ছে একে একে।রুপাইয়ের তীরই আমার গতি। মনটা বিষণ্ণ হল। বরেনদার মত মানুষের মুখে এরকম কথা আগে শুনিনি। লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে উদ্দেশ্যহীন হাটছি।দুর থেকে দেখলাম ভোলা আসছে। কাছে এসে বলল, মনাদা হেভি কিচাইন—হি-হি-হি। মনে মনে ভাবি আবার কি খবর আনল ভোলা? –রমেশদার বউ পেট বাধিয়েছে। রমেশদা বলছে জেলে ছিল কি করে হল? ওনার বউ কিছুতেই মুখ খুলছেনা। এ শাল-আ নকুড়দালালের কীর্তি–হে-হে-হে। শিরদাঁড়ার মধ্যে শীতল শিহরণ বোধ করি।আগেরবার মলিনাবৌদি থানায় কিছু বলেনি, এবার সব ফাঁস করে দেবেনা তো? –মনাদা তুমি চলে যাচ্ছো শুনলাম। ভাল, এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি পালাতে পারো–ভাল। আমিও একদিন চলে যাবো কোথাও। ভোলার কথায় সম্বিত ফেরে ,জিজ্ঞেস করি, কোথায় যাবি? ম্লান হাসি ফোটে ভোলার মুখে,পেটে নেই বিদ্যে,দিদিমণির দয়ায় চাকরিটা পেয়েছি আচ্ছা মনাদা তুমি আমাকে নিয়ে যাবে? শুধু দু-বেলা দু-মুঠো খেতে দিলেই হবে। তোমার সব কাজ আমি করে দেব। –মাসিমার কি হবে? –তা ঠিক। বুড়ির তো আমি ছাড়া কেউ নেই। মনে এল দাদার কথা,অনেক লেখাপড়া শিখেছে তাও বলবো অশিক্ষিত ভোলার কাছ থেকে তার অনেক শেখার আছে। মায়ের প্রতি ভোলার কর্তব্যবোধ আমাকে মুগ্ধ করে। –দ্যাখ ভোলা, বরেনদা বলছিল গরুবাথান খুব ভাল জায়গা।একদিন তোকে নিয়ে যাব, দার্জিলিং খুব কাছেই–। –দিদিমণি অনেকদিন বাচবে,যেই নাম করেছি–ঐ দ্যাখো। তাকিয়ে দেখলাম অনুদি হাতের ইশারায় আমাকে ডাকছে। ভালই হল হিজলতলি ছেড়ে যাবার আগে একবার দেখা করে যাবার কথা ভাবছিলাম। মাইনে পেলে ধীরে ধীরে অনুদির ঋণ শোধ করতে হবে। ওয়ে আউট সেন্টারের টাকা অনুদি দিয়েছে। –তুমি তো সব শুনেছো?হিজলতলি ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে জানো? –কে আছে তোর হিজলতলিতে? চাকরি করবি না,মাকে কে দেখবে? আড়াইডাঙ্গায় মাকে দেখার অনেক লোক আমি বললাম না, তোমার সঙ্গে দেখা হবেনা–। –আমি কি চিরকাল হিজলতলিতে থাকবো? বিয়ে হলে কোথায় চলে যাবো তার কোন ঠিক আছে? শোন দময়ন্তী এসেছিল, আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে গেল।তুই কি ওকে কিছু বলেছিস? –কে আমি ? বিশ্বাস করো আমি কিচ্ছু বলিনি। সব ব্যাপারে খবরদারি করবে। দাড়াও দেখা হোক বলছি–। –কি বলবি? –কি বলি বলতো? কোন কথা শুনতে চায়না।বাবাকে কি বলে জানো? ডাক্তার সেন? অনুরাধা হাসি দমন করতে পারেনা,খিলখিল করে হেসে বলে, শোন মনা বিডিও দায়িত্বপুর্ণ পদ।এরকম ছেলেমানুষি করলে হবেনা। –আমি কি পারবো? বোজোদি একটা মন্ত্র শিখিয়ে দিয়েছিল সেই মন্ত্র বললে কোন কাজই অসাধ্য নয়। –ঠিক আছে আমাকে আর টাকা শোধ করতে হবেনা। তুই দময়ন্তীকে শোধ করে দিবি। –হ্যাঁ একজনকে দিলেই হল কি বলো? যদি না নেয়? –এখন বাড়ি যা, কাল তোকে আবার লঙ জার্নি করতে হবে। গোছগাছ বলতে গেলে সারা,এখন রাত পোহানোর অপেক্ষা। ব্যাগ খুলে আর একবার দেখে নিই কিছু বাকি থাকলো কিনা? চিত্রা সিং অপেক্ষায় আছেন আমি কবে যাবো। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় চিত্রা সিং বদলি হয়েছেন।তার জায়গায় আমাকে যেতে হবে। মলিনাবৌদি পোয়াতি হয়েছে,অনুদি আমার ব্যাপারটা জানে।কেন যে অনুদিকে সব বলতে গেলাম? সন্ধ্যেবেলা অনুদির সঙ্গে কথা হল কিছু বলেনি ঐসব ব্যাপারে।সরোজমোহনের ভাই হওয়া সত্বেও অনুদি আমার জন্য যা করেছে কোনদিন ভুলবোনা।অনুদি বলছিল আর জন্মে আমাকে বিয়ে করবে।কিন্তু দিয়াও যদি তা বলে কার কথা শুনবে ভগবান?বাক্সের ডালা এবার বন্ধ করা যাক মা থাকলে এসব আমাকে করতে হতনা।যাঃ লোড শেডিং–ভাগ্যিস গোছগাছ শেষ।আকাশে জ্যোতস্না ফুটফুট করছে।জানলা দিয়ে আলো এসে পড়েছে।হ্যারিকেন জ্বালতে গিয়েও জ্বাললাম না।বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছি।আড়াই ডাঙ্গায় লোড শেডিংয়ের বালাই নেই।সেখানে অনেক কাজের লোক।খুব ইচ্ছে করছিল যাবার আগে দিয়ার সঙ্গে একবার দেখা হোক।আবার যখন হিজল তলিতে ফিরব দিয়া হয়তো তখন নতুন জীবন শুরু করেছে শ্বশুরবাড়ীতে। কে যেন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতে চমকে উঠে বলি, কে-এ-এ? খিলখিল করে হেসে উঠল দময়ন্তী,তুমি যে বল আমার গন্ধ নাকি টের পাও? –ও তুমি? আচমকা বুঝতে পারিনি। দেখেছো গায়ের লোম কিরকম খাড়া হয়ে গেছে। আধো আলো-অন্ধকারে দিয়াকে কেমন রহস্যময়ী মনে হয়। –কবি তোমাকে কি কথা বলছিল? –কে অনুদি? অনুদি বলছিল সেন্টারের টাকা তোমাক ফেরত দিতে। –একবার ফেরত দিয়ে দ্যাখো?চোখ পাকালো দময়ন্তী। –আমি কি বলেছি দেব? তুমি কি সবার সঙ্গে এরকম চোখ রাঙ্গিয়ে কথা বলো? –সবাই আর তুমি কি এক?আচ্ছা মোন,আমি কি শুধু জোর করে সম্পর্ক গড়েছি? –জোর করে শরীরের দখল পাওয়া গেলেও মনের নাগাল পাওয়া যায়না।।.
Comments:
No comments!
Please sign up or log in to post a comment!