বাংলা চটি কাহিনী – অবদমিত মনের কথা – ২২

গলির মুখে মেয়েদের জটলা,পাশ কাটিয়ে যাবার সময় কানে এল,মালতীর নাগর। কলকল হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে। এই জীবনে এত হাসি পায় কোথায়? গলি থেকে রাজপথে নেমে মাথা উচু করে দেখল,তারা ঝলমল পরিষ্কার আকাশ। কোথাও এক ছিটে মেঘের কলঙ্ক নেই। হাতে ধরা দোমড়ানো পাঁচশো টাকার নোটের দিকে তাকিয়ে চোখ ছল ছল করে ওঠে। পাড়ার সঙ্গে সম্পর্ক চুকে বুকে গেছে সেই কবে, তাহলে কেন দিল টাকা? পরকালের পারানির কড়ি? বাস আসতে উঠে পড়ল। এতদিন কত ভুল ধারণা বয়ে বেড়িয়েছে ভেবে অনুশোচনা হয়। বিশাল এই পৃথিবীতে কে কোথায় কোন প্রান্তে কীভাবে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তার কতটুকু খবর কজন রাখে। সেই তুলনায় রত্নাকর তো ভালই আছে। নিজের মধ্যে যেন লড়াইয়ের শক্তি ফিরে পায়।

চারতলা বাড়ীর নীচে পুলিশের জিপ এসে দাড়ালো। বড়বাবু চোখ তুলে তাকালো,জ্বলজ্বল করছে লেখাটা–দি রিলিফ। দারোয়ান গেট খুলে দিতে গাড়ী ঢুকে গেল। নীচটা পুরোটাই পার্কিং প্লেস। সারি সারি গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে। সিড়ী দিয়ে দোতলায় উঠে এল স্থানীয় থানার ওসি সিকদারবাবু। এখানে নিত্য যাতায়াত আছে বোঝা যায়। দোতলা পুরোটাই হল ঘর। একপাশে বেদীতে এক মহিলা সন্ন্যাসীর ছবি হাতে জপমালা। মেঝেতে কার্পেট বিছানো। বেশকিছু নারী পুরুষ চোখ বুজে ধ্যান করছে। সবই অভিজাত পরিবারের দেখে বুঝতে অসুবিধে হয়না। হলের পাশ দিয়ে সরু প্যাসেজ চলে গেছে। প্যাসেজের পাশে ছোটো ছোটো ঘর। শেষ প্রান্তে একটা ঘরের কাছে সিকদার বাবু দাড়ালেন। রুমাল বের করে ঘাম মুছলেন। দরজায় টোকা দিতে ভিতর থেকে নারী কণ্ঠ শোনা গেল,কামিং।

সিকাদারবাবু ভিতরে ঢূকলেন। বিশাল সেক্রেটারিয়েট টেবিল,টেবিলে ল্যাপটপ জলের গেলাস। অন্যদিকে মাথায় কাপড় জড়ানো সন্ন্যাসিনী মত দেখে বয়স অনুমান করা কঠিন। তিরিশও হতে পারে আবার পঞ্চাশ হওয়াও সম্ভব। ইঙ্গিতে সিকদারবাবুকে বসতে বললেন। মহিলার চেহারায় একটা সম্মোহনী ভাব। –নমস্তে আম্মাজি। সিকদার বাবু বসলেন। –নমস্তে। আম্মাজী হাসলেন। –এদিকে এসেছিলাম,ভাবলাম আম্মাজীর সঙ্গে দেখা করে যাই। –একটা রিকোয়েস্ট করবো? আপনি সব সময় স্বাগত কিন্তু ইউনিফর্মে আসলে সবাই প্যানিকি হয়ে পড়ে। –হে-হে-হে। সিকদার দাত কেলিয়ে দিল। –টাকা পয়সা–? –না না ওসব ঠিক আছে আম্মাজী। আপনি থাকতে ওসব নিয়ে চিন্তা করিনা। আচ্ছা এরপর সিভিল ড্রেসেই আসবো। –সব খবর ভাল আছেতো? –আপনার আশির্বাদ। –নিতিয়ানন্দকে বলবেন দেখা করতে। –ঘোষবাবু? কেন কিছু গড়বড় করেছে? –দাওয়াই দিতে হবে। –হে-হে-হে। সিকদার বিগলিত হাসে।

বোকাচোদা ঘোষ খুব বেড়েছে। সবে ইন্সপেক্টর হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। এসপি সাহেব একবার বাচিয়েছিল,এবার দেখি তোর কোন বাপ বাচায়। নিত্যানন্দ তাকে টক্কর দিতে চায়। ভাগ্যিস এসেছিল তাই খবরটা পেল। বাস থেকে নেমে রতি ভাবে পঞ্চাদার দোকানে যাবে কিনা? মোবাইলে সময় দেখল,সোয়া-নটা। ওরা কি পঞ্চাদার দোকানে আছে নাকি ঘুরে ঘুরে চাঁদা তুলে বেড়াচ্ছে? দোকানে থাকলে একটু বসে যাবে। একটা পরীক্ষা বাকী, হয়ে গেলে নিশ্চিন্তি। মনে পড়ল বিজুদা দেখা করতে বলেছিল। কোর্ট থেকে এতক্ষনে বাসায় ফিরে এসেছে নিশ্চয়ই। ভাবতে ভাবতে বাড়ির কাছে এসে পড়েছে। গ্রিলে ঘেরা বারান্দায় বসে আছে বেলাবৌদি। রতিকে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,কালেকশন শেষ? –আমি যাইনি অন্য কাজ ছিল। বৌদি বিজুদা নেই? –আয় ভিতরে আয়। এইমাত্র বাথরুমে গেল।

রত্নাকর গ্রিল ঠেলে ভিতরে ঢুকল। একটা বেতের চেয়ার টেনে বসল। বেলাবৌদি বলল, বিজুদা এলে একসঙ্গে চা করবো। –বিজুদা আমাকে দেখা করতে বলেছিল। তুমি কিছু জানো কি ব্যাপার? –দিবাকর তোদের খোজ খবর নেয়না? –আসে তবে খুব কম। নিজের সংসার সামলে আসাও অনেক ঝামেলা। – -তোর যে কি হবে তাই ভাবছি। বেলাবৌদি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে।

বিজুদা লুঙ্গি পরে তোয়ালে গায়ে এসে বসল। বেলাবৌদি উঠে চলে গেল। রতিকে দেখে জিজ্ঞেস করে,কেমন আছিস? রত্নাকর বুঝতে পারে এটা ভুমিকা। বিজুদা বলল,দিবাটা অনেক বদলে গেছে। রত্নাকর ভাবে তাহলে কি দাদার সম্পর্কে কিছু বলবে? বিজুদা জিজ্ঞেস করল,হ্যারে দিবা মাসীমার সঙ্গে দেখা করতে আসেনা? –আসে খুব কম। বেলাবৌদি তিনকাপ চা নিয়ে ঢুকল। বিজুদা চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,বাড়ীটা দিবা মনে হয় প্রোমোটারকে দেবার চেষ্টা করছে,তুই কিছু জানিস?

রত্নাকর হাসল,এ আর নতুন কথা কি? বলল,এই নিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে। মা বলে দিয়েছে বেঁচে থাকতে এবাড়ীতে কাউকে হাত দিতে দেবেনা। –ও এতদুর গড়িয়েছে? পরামর্শের জন্য এসেছিল আমার কাছে। বাড়ি মাসীমার নামে তোর কিছু করার নেই ওকে বলেছি। একটাই মুস্কিল চিরকাল তো কেউ থাকবেনা। বিজুদা কি বলতে চায় বুঝতে অসুবিধে হয়না। মা না থাকলে দাদা তাকে বঞ্চিত করতে পারে? করলে করবে। চা শেষ করে বিজুদা বলল,বেলি আমি যাই,তোমরা গল্প করো। বেলাবৌদিকে বিজুদা বেলি বলে? বেলা বলতে অসুবিধে কোথায়? বেলাকে বেলি বললে আরো কাছের মনে হয় হয়তো। লক্ষ্য করছে বেলাবৌদি তাকে গভীর ভাবে লক্ষ্য করছে। রত্নাকর বুঝেও রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। –লেখকরা সব সময় কি ভাবে বলতো?

বেলাবৌদির প্রশ্ন শুনে ফিরে তাকালো রতি। বলল,ভাবনা-চিন্তা হীন মস্তিষ্ক হয় না। লেখক কেন সবাই সব সময় কিছু না কিছু ভাবে। –যা জিজ্ঞেস করছি বুঝতে পারিস নি? সবাই কি একরকম ভাবে? রত্নাকর হেসে ফেলে বলল,তুমি বলছো আমি কি ভাবি বা কেমনভাবে ভাবি? একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবে। ধরো তোমার সঙ্গে কথা বলছি,বলতে বলতে মনীষাবৌদির কথা ভাবি। কোথায় মিল কোথায় দুজনার অমিল বোঝার চেষ্টা করি। –তোর দাদার উপর রাগ হয়না? –রাগ হবে কেন বরং একটা কারণে কষ্ট হয়। –কষ্ট হয়? –দাদার একটা ছেলে আছে,শুনেছি সে নাকি এখন স্কুলে যায়। অথচ তাকে একদিনও চোখে দেখিনি। সেও কি জানে তার একজন কাকু আছে? রত্নাকরের চোখ ঝাপসা হয়ে এল। –যাদের এরকম চোখে জল এসে যায় তাদের মনটা খুব নরম। –তুমি তো সাইকোলজির ছাত্রী। নরম মন কি খারাপ? –মনটাকে শক্ত করতে হবে। নরম মনের মানুষরা সহজে অপরের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। মানুষ নরম মনের সুযোগ নেয়। –মন শক্ত করব কি করে? কোনো ওষুধ আছে নাকি? –বেলি একবার আসবে? ভিতর থেকে ডাক এল। বেলাবৌদি বলল,তোকে একটা বই দেবো। যোগ সাধনার বই,পড়ে দেখিস।

রত্নাকর কিছুক্ষন বসে বেরিয়ে পড়ল। পঞ্চাদার দোকানে যাবার ইচ্ছে নেই। কিছুক্ষন পর খেয়াল হয় অন্যপথে চলে এসেছে। পথ ভুল হোল কেন? কি ভাবছে সে মনে করার চেষ্টা করে। পিছন থেকে কে যেন ডাকছে মনে হল। পিছন ফিরে তাকাতে দেখল উমাদা হনহন করে আসছে। কাছে এসে বলল,কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাস না? এদিকে কোথায় যাচ্ছিস? –আসলে কি একটা যেন ভাবছিলাম তাই শুনতে পাইনি। তোমাদের কালেকশন শেষ? –হ্যা অনেক্ষন আগে। জাস্টিস আঙ্কেলের বাসায় গেছিলাম। বৌদি বলল,তোকে একটা বই দেবে,এসে দেখে তুই নেই,বলে আসবি তো?

রত্নাকর বোকার মত হাসল। উমাদা জিজ্ঞেস করে,তুই কখন এসেছিস? –আমি এসে বিজুদার সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম। উমানাথ লক্ষ্য করে রতি যেন কি ভাবছে। বিজুদার সঙ্গে কি কথা হয়েছে? খারাপ কিছু? বেলাবৌদি এই বইটা রতিকে দিল কেন? –উমাদা তোমার ছবিদিকে মনে আছে? উমানাথের কানে নামটা যেতেই চমকে ওঠে জিজ্ঞেস করে,কোন ছবিদি? –ওইযে রমেশদার দিদি?

চিন্তিতভাবে উমা বলল,ও হ্যা বাড়ী থেকে পালিয়ে গেছিল? –পালিয়ে গেছিল তুমি কি করে জানলে? –অত জানিনা,শুনেছি খারাপ লাইনে গেছে। উমা ভাবে এতদিন পর রতি ছবিদির কথা কেন তুলল? আড়চোখে রতিকে দেখে বইটা এগিয়ে দিয়ে বলল,বেলাবৌদি এটা তোকে দিতে বলেছে। রতি বইটা হাতে নিয়ে দেখল,ইংরেজি বই-” How to control your mind”,লেখক বিদেশী। পকেট থেকে পাঁচশো টাকার নোটটা বের করে উমাদার হাতে দিয়ে বলল,ছবিদি ফাণ্ডে দিয়েছে। উমানাথ তড়িদাহতের মত হাতটা সরিয়ে নিল। রতি অবাক গলায় বলে,কি হল? –ছবিদির টাকা? মানে তুই তো জানিস ছবিদি এখন খারাপ লাইনে নেমেছে? –টাকার কি দোষ? যত টাকা কালেকশন হয়েছে তুমি নিশ্চিত সব সৎপথে উপার্জিত? ছবিদির রক্ত জলকরা এই টাকা।

উমানাথ বিস্মিত চোখ মেলে রতির দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর হেসে বলল,তোর সঙ্গে দেখা হোল কোথায়? রতি বিস্তারিত বলল উমাদাকে। উমা বলল,আমার সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। আমি এড়িয়ে গেছি। তুই যা বললি এসব কিছুই জানতাম না। খুব অন্যায় হয়েছে ছবিদির উপর। শোন রতি এসব আর কাউকে বলবি না,তারা অন্য অর্থ করবে। কিন্তু আমি ভাবছি টাকাটা নিলে সবাই জানতে পারবে, ছবিদিকে নিয়ে বিচ্ছিরি আলোচনা শুরু হয়ে যাবে। –সেটা ঠিক বলেছো। মালতির নামে জমা করে নেও। ছবিদি এখন মালতি কেউ চিনতে পারবে না। রতি দেখল উমাদা কেমন অন্য মনস্ক,জিজ্ঞেস করে, কি ভাবছো? উমানাথ হেসে বলল,ভাবছি তোর কথা। তুই আমার থেকে ছোটো কিন্তু তোর মন অনেক বড়। বৌদি ঠিক বলে–। –কে বৌদি? –আমার বৌদি। –মনীষাবোদি আমাকে খুব ভালবাসে। কি বলছিল বৌদি? –তুই খুব আবেগ প্রবন,গতিবেগ মাত্রা ছাড়ালে নিয়ন্ত্রণ হারাবার সম্ভাবনা ভুলে যাস না।

বাড়ি ঢুকতে মনোরমা বলল,আমার পেটে কি করে এমন ছেলে জন্মালো তাই ভাবি? রত্নাকর ভাবে তাকে জন্ম দিয়ে মায়ের মনে আক্ষেপ? মনটা খারাপ হয়ে গেল। পরক্ষণে মা বলল,মানুষ এত স্বার্থপর হয় কিভাবে বুঝিনা। এবার মনে হল মা হয়তো দাদার কথা ভেবে বলছে। মায়ের কাছে শুনল দাদা এসেছিল। ছেলে বড় হচ্ছে,ঘর দরকার। বাড়ীটা পুরানো হয়ে গেছে। এখন নতুন প্লানে বাড়ি হচ্ছে মাকে বুঝিয়েছে। নতুন প্লানে বাড়ী কর কে মানা করেছে? মা নাকি বলেছিল,রতির কথাটা ভাববি না? দাদা উত্তর দিয়েছে,তুমি এমনভাবে বলছো যেন আমার অঢেল রোজগার। তাছাড়া যখন ফ্লাট হবে ও সমান ভাগ পাবে।

ডায়েরী লিখতে বসে একটা প্রশ্ন প্রথমেই মনে হল। ছবিদি ইজ্জত বাচাবার জন্য ঘর ছেড়ে এপথে গেল কেন? এখন তাকে কতজনের মনোরঞ্জন করতে হচ্ছে। এমন কি সেই বৌদির ভাইয়ের সঙ্গেও মিলিত হয়েছে স্বেচ্ছায়। ছবিদির কাছে দেহের সুচিতার চেয়ে বড় হয়ে উঠেছিল আত্মমর্যাদা প্রশ্ন। শ্বশুরবাড়ীতে আত্মমর্যাদা রক্ষা করে থাকা সম্ভব হয়নি। রত্নাকর কখনো এভাবে ভাবেনি। কত বিশাল ভাবনার জগত,যত জানছে পুরানো ধ্যান -ধারণা চুরচুর হয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। পুথি পড়ে এসব শিক্ষা হয়না। যতদিন যাচ্ছে মনের অহংকার কর্পুরের মত উবে যাচ্ছে। কত কি জানার আছে কতটকুই বা জানে তার?

সঙ্গে থাকুন …

Comments:

No comments!

Please sign up or log in to post a comment!